চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের বেড়ে শুয়ে আছে এক বছর চার মাস বয়সী সুসান্না ত্রিপুরা। কিছুক্ষণ পরপর প্রচন্ড ব্যথায় কাতরাচ্ছে শিশুটি। মা রুংদতি ত্রিপুরা নানাভাবে চেষ্টা করেও কোনো রকমে তার কান্না থামাতে পারছে না। কারণ ছোট্ট শিশুটির মুখে, বুকে ও মাথায় লেগে আছে গুলি। এর প্রচন্ড ব্যথায় কান্না করছিল সে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্বামী ও শ্বশুরকে হারিয়েছে শিশুটির মা রুংদতি। সেদিন তার দুই শিশুও গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
এর মধ্যে এক বছর চার মাস বয়সী সুসান্না ত্রিপুরা বর্তমানে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালে আছে মুখে গুলি লাগা চার বছর বয়সী ছেলে অনন্ত ত্রিপুরাও। সে রুংদতির আরেক সন্তান। এখন শোককে পাথর চাপা দিয়ে তাদের বাঁচানোর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, মাথায় রয়ে যাওয়া ছররা গুলির কারণে তার এমন পরিস্থিতি। শিশুটি যখন ঘুমে থাকে, তখন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু ঘুম ভাঙলেই কাঁদতে থাকে। এর মধ্যে সুসান্নার মাথার সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে।
রোববার তার প্রতিবেদন দেখে চিকিৎসকরা বলছেন, ছররা গুলি মাথায় রয়ে গেছে। তবে বয়স খুব কম হওয়ায় গুলি বের করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এ ঘটনার জন্য স্থানীয় লোকজন পাহাড়ে গড়ে ওঠা নতুন সংগঠন ‘কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে’ (কেএনএফ) দায়ী করছে।
রুংদতি এখনও জানে না তার স্বামী-শ্বশুরের কী দোষ ছিল? কিংবা কী কারণেই তার দুই শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে? ওই দিন সন্ধ্যায় রান্নাঘরে থাকায় বেঁচে যান এই নারী।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুংদতি ত্রিপুরা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সন্ধ্যাবেলা আমি রান্না করছিলাম। আমার দুই ছেলে-মেয়ে বাড়ির বারান্দায় তাদের দাদুর সাথে খেলছিল। আমার স্বামীও ঘরের ভেতরে ছিল। হঠাৎ করে ২৫-৩০ জন লোক এসে এলোপাথাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এসময় আমার শ্বশুর বিছাই ত্রিপুরা ও স্বামী সুভাষ ত্রিপুরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দাদুর সাথে থাকায় আমার দুই ছেলে-মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। আমি কোনো রকমে সেখান থেকে পালিয়ে প্রথমে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাদের নিয়ে যাই।
সেখানকার ডাক্তাররা মেয়েকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এখানে ভর্তি করেছি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুল কাদের বলেন, তার বুকে ও মাথায় গুলি রয়েছে। এখন শারীরিক পরিস্থিতি ঠিক আছে। পরে গুলি বের করার বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সাইজাম পাড়ায় একবার এসে হুমকি দিলে আমরা সবাই সেখান থেকে সরে যাই বললেন রুংদতি ত্রিপুরা। কিন্তু পরিবারের সবাই জুমচাষের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় এবং গরু-ছাগল রেখে যাওয়ায় দুই পরিবার গত ৬ জুন পাড়ায় ফিরে আসে। তার কিছু দিনের মধ্যেই এই হামলা হল।