বৃহস্পতিবার , ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পেজ ভরালেই নাম্বারঃ ব্যর্থ সৃজনশীল পদ্ধতি !

আসাদ আজিম:

বলা হয় সৃজনশীল পদ্ধতিতে মেধার কদর করা হয়, কে কত মেধাবি,তা চারটি ধাপে বিবেচনা করে নাম্বারিং করার মাধ্যমে যোগ্যদের মুল্যায়ন করা হয়। কিন্তু আদৌতেই কি তাই! সত্যিই কি এমন সুন্দর সুবিমল শিক্ষা পদ্ধতিতে জাতির শিক্ষাব্যাবস্থা দন্ডায়মান? বন্দরনগরীর বিভিন্ন স্কুল কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানাচ্ছে ভিন্ন কথা।

সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, যত বেশি লেখা তত বেশি নাম্বার দেয়ার প্রবনতা চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে। শিক্ষকরাই অনেক সময় বলে দেন বেশি লিখতে। সৃজনশীলতা কিংবা ক্ষুরধার চিন্তা নয় বরং কত বেশি লেখার সক্ষমতা আছে তা দিয়েই বিচার করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পৃষ্ঠা সংখ্যাই যেন এখানে একমাত্র মানদণ্ড। লেখার বিষয়ের যৌক্তিকতা কিংবা লেখার মানের উপর ভিত্তি করে নাম্বারিং করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না কোথাও।

এইচ এসসি ও এসএসসিতে ইংরেজি বিষয়ে ২০০-২৫০ শব্দে রচনা লেখতে দেয়া হয়, নাম্বার থাকে ১০-১৫ এর ঘরে (মানবন্টন পরিবর্তন হয় তাই নির্দিষ্ট নয়)। ২৫০ শব্দের একটি প্যারাগ্রাফ লিখতে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই পৃষ্ঠা দরকার কিন্তু আদতে এতটুকু লিখে নাম্বার পাওয়া কষ্ট সাধ্য কারণ শিক্ষকরা লেখার ব্যাকরণ, যুক্তির সন্নিবেশের চেয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ফলে তোলা সম্ভব হয় না নাম্বার। শিক্ষার্থীরাও তখন মেধাশক্তি খাটানোর চেয়ে কলমের গতিকে অধিক প্রাধান্য দেন। প্রায় সব বিষয়েই এমন অবস্থা।

সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতির চারটি অংশ। জ্ঞানমূলক, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা। প্রতিটি অংশ লেখার আছে নির্দিষ্ট পদ্ধতি। জ্ঞানমূলক ও অনুধাবন অংশে মোটামুটি মুল্যায়ন হলেও। প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতায় নাম্বারের পুরোটাই দেয়া হয় পৃষ্ঠা সংখ্যার ভিত্তিতে লিখতে হয় ২পৃষ্ঠা। ফলে পরীক্ষার সময় পুরোটা ইদুর দৌঁড়ের মতো তাড়াহুড়ায় কাঁটাতে হয়।

তানভীর নামে মহসিন কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী জানান,”ছাত্ররা সৃজনশীল পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগ না ঘটিয়ে বরং বেশি বেশি লেখার দিকে মনোযোগী হয়। সে কি লিখছে সেদিক তার খেয়াল থাকে না। ফলে মানসম্মত লেখা উঠে আসে না”।

নুসরাত নামে আরেক এক শিক্ষার্থী  বলেন,সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে যেটা বলবো আমাদের পাঠ্যসুচি যদিও এখন সৃজনশীল ভিত্তিক কিন্তু আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক আছেন যারা পুরাতন শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করেই আমাদের খাতা গুলো মূল্যায়ন করেন। এইজন্য  তারা বিভিন্ন গাইড বা নোট অনুসরণ করে খাতাটা মূল্যায়ন করেন এবং অনুসরণ করেন যেকোনো একটি বই। যার ফলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে যথাযথ  উত্তর করলেও স্যারের অনুসরণকৃত বইয়ের মতো উত্তর না হলে আমাদের পূর্ণ নাম্বার দেওয়া হয় না।
আর স্যাররা সৃজনশীল মানেই বুঝেন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা । কিন্তু সৃজনশীলের আসল মানে তো এটা নয়। সৃজনশীল মানে নিজেদের মতো করে প্রশ্নে কি চাওয়া হয়ছে তার একটা উত্তর দেওয়া। চাইলে একজন শিক্ষার্থী সেটা ১০ পৃষ্ঠা লিখে বুঝাতে পারে বা ১ পৃষ্ঠা। আমার মনে হয় আমাদের প্রায় শিক্ষকরা সৃজনশীলতার আসল মানেটাই বুঝেন না যার ফলে স্টুডেন্টরা মানসম্মত নাম্বার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রাথমিক স্তরে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন (সৃজনশীল) পদ্ধতি চালু হয়। আর ২০০৭ সালের ১৮ জুন প্রজ্ঞাপন জারি হলেও ২০০৮ সালে মাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল শিক্ষাপদ্ধতি চালু করা হয়। শুরুতে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন চালুর তোড়জোড় চলে। কয়েকজন শিক্ষাবিদের পরামর্শে সৃজনশীল (ক্রিয়েটিভ) নাম দিয়ে মূলত কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নপদ্ধতিই চালু করা হয়। এখন ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭০ নম্বর সৃজনশীলে প্রশ্ন এবং ৩০ নম্বর হয় বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে।