বৃহস্পতিবার , ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মেকলে মিনিটঃ চাপিয়ে দেয়া শিক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

উপমহাদেশে, ইংরেজদের বিচরন আধিপত্য নিয়ে কে না জানে। বৃটিশরা উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ দেশ ও জাতিকে নানা ভাবে নানা কায়দায় শাসন করেছে। বল প্রয়োগ করে, কিংবা ভয় দেখিয়ে শাসন করেছে প্রায় ২০০ বছর।

তবে বৃটিশদের শাসনের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা সম্ভবত লর্ড ব্যাবিংটন মেকলের শিক্ষানীতি। ইতিহাসে যা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত।

টমাস ব্যাবিংটন এডওয়ার্ড মেকলে ছিলেন একাধারে লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের আইন সচিব এবং ‘ কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন ‘ – এর সভাপতি । তিনি প্রাচ্যশিক্ষার পরিবর্তে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিষয়ে যে বিখ্যাত প্রস্তাব পেশ করেন ( ১৮৩৫ খ্রি . ২ ফেব্রুয়ারি ) তা ‘ মেকলে মিনিটস ‘ বা ‘ মেকলে মিনিট ‘ নামে পরিচিত।

এ সম্পর্কে তিনি ভাবতেন বৃটেনের একটি বইয়ের তাক,সমগ্র ভারত ও আরবের সকল বইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। প্রাচ্যের শিক্ষা তার মতে পশ্চাদপদ এক শিক্ষা ব্যবস্থা।

ইংরেজ শাসনের সূচনা পর্বে কোম্পানি ভারতে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের বিরোধী ছিল কোম্পানি মনে করত যে ইংরেজি শিক্ষা পেলে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পাবে, এবং হয়তো ভারত কোম্পানির হাতছাড়া হয়ে যাবে। এই কারণে কোম্পানি ভারতে সংস্কৃত ও আরবি এবং ফারসি শিক্ষাতেই উৎসাহ দিত। প্রাচ্যবিদদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস, হেনরি প্রিন্সেস, ও উইলসন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। এই গোষ্ঠী প্রাচ্যবাদী গোষ্ঠী নামে পরিচিত।

প্রাচ্যবাদী এর বিপক্ষে আরেকটি গোষ্ঠী ছিল তারা পাশ্চাত্য বাদী গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এই গোষ্ঠীর বিখ্যাত কয়েকজন ব্যক্তিবর্গ হলেন চার্লস গ্রান্ট, টমাস বাবিংটন মেকলে (Thomas Babington Macaulay) ।এরা মনে করতেন যে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য বিদ্যার চর্চা ভারতের পক্ষে মঙ্গলজনক। এই গোষ্ঠীর অন্যতম ব্যক্তি লর্ড মেকলে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি প্রস্তাব আনেন, এবং এটিই মেকলে মিনিট।

মেকলে লক্ষ্য ছিল সাংস্কৃতিক বিজয়। তিনি বলেন যে “পাশ্চাত্য শিক্ষার ফলে এমন এক ভারতীয় গোষ্ঠী তৈরি হবে যারা রক্তেবর্ণে হবে ভারতীয় কিন্তু রুচি, মত, নৈতিকতা এবং বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ। তারাই পরে জনগণের মধ্যে নতুন জ্ঞান প্রচার করবে এবং ইংরেজি শিক্ষার ফলে ভারতে নবজাগরন আসবে”। মেকলের বাগ্মিতা ও যুক্তির ফলে ইংরেজি শিক্ষার সমর্থনকারীরা জয়যুক্ত হন এবং ১৮৩৫ সালের ৭ই মার্চ লর্ড বেন্টিঙ্ক ইংরেজি শিক্ষাকে সরকারি নীতি রূপে ঘোষণা করেন।

মেকলেরা চলে গেছে অনেক বছর,কিন্তু তারা কিছু মনস্তাত্ত্বিক ইংরেজ রেখে গেছে। যারা ইংরেজূের অনুগত হয়ে থাকতে চায়। নিজেদেরকে পাশ্চাত্যের নোংরামিতে শ্রেষ্ঠ মনে করে। তারা ভাবে এইতো সফলতা। ইউরোপের একটি ভিসা পেলে তারা আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত লাফিয়ে উঠে।
বাঙালীয়ানা তাদের ভাষায় “ক্ষ্যাত” অথচ হাজার বছরের এই বাঙালীয়ানাই আমাদের পরিচায়ক। হাজার বছরের এই বাঙালী চেতনা আমাদের অহংকার। বাঙালী তাই জেগে উঠুক আরেকবার।
মেকলেদের তাড়িয়ে নিজস্ব সংস্কৃতিতে বলীয়ান হোক এটাই প্রত্যাশা।