বুধবার , ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চবিতে ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: বর্তমান বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে রোববার (২৮ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১ টায় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন।

চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. সেলিনা আখতারের সভাপতিত্বে সেমিনারে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর মোঃ রুহুল আমিন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ সেকান্দর চৌধুরী। চবি শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি এবং সেমিনার উপ কমিটির আহবায়ক প্রফেসর আবদুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সজীব কুমার ঘোষ।

উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। জাতির পিতা তাঁর স্বপ্ন পূরণে যখন সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখনি হায়েনার দল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছিল। এ সকল নরপশুদের সে মনোবাসনা পূরণ হয়নি, তারা নিজেরাই ইতিহাসের ঘৃণ্য কীট হিসেবে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে বর্তমানে জাতির পিতার স্বপ্ন ধাপে ধাপে পূরণ করে চলেছেন। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর এ অগ্রযাত্রা কোনভাবেই যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে সকলকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য উপাচার্য সবাইকে উদাত্ত আহবান জানান।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন তাঁর প্রবন্ধে বলেন, বাঙালির জীবনে শোক ও শক্তির নির্যাস আগস্ট মাস। বঙ্গবন্ধুর শারীরিক মৃত্যু শোকের দহন। বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও আদর্শের অমরত্ব শক্তির ঝর্ণাধারা। শোকের দহন তাঁকে হারানোর কষ্ট, শক্তি ঝর্ণাধারা আগামী প্রজন্মের অবিনাশী চেতনা। বাংলা ও বাঙালির সত্তায় এগিয়ে চলার শক্তি। বিশ্ব জুড়ে বাংলার যে পরিচিতি সে অর্থে এ ভূখন্ডে শুধু ভৌগোলিক আকারে খর্বীকৃত বলার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ সময় ধরে বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের অপেক্ষায় সময়ের পরিসর অতিক্রম করেছে। তিনিই উপমহাদেশের একমাত্র নেতা যিনি উপমহাদেশের মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সংযোজন ঘটিয়েছেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি এ অর্জনে নিজেদের নিবেদন করেছেন বীরদর্পে। মানুষের ভালোবাসার অবিস্মরণীয় চেতনাবোধে সিক্ত হয়েছে তাঁর নেতৃত্বের দৃঢ়তা।

বাংলা একাডেমির সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যবর্গকে হত্যার মধ্য দিয়ে বিপথগামী কতিপয় ব্যক্তি ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার পরিবর্তে এদেশে মৌলবাদী এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে অব্যাহতভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে পারবে। শত ষড়যন্ত্র এবং চেষ্টা করেও তাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। পরিবর্তে একুশ বছর সংগ্রামের পর স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।

সেলিনা হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবস মৃত্যুর উর্দ্ধে জীবন সত্যের বড় পরিচয়। বিশ্বের অনেক নেতা যেভাবে ইতিহাসের পৃষ্ঠায় আছেন অজেয় প্রেরণায় তেমনি বঙ্গবন্ধু আছেন। তিনি বাঙালির ত্রাণকর্তা। হাজার বছর ধরে বাঙালি এ ত্রাণকর্তার অপেক্ষায় ছিল। বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতির আবহমান ¯স্রোতে বঙ্গবন্ধু নতুন অভ্যুদয় ঘটিয়েছেন। বাঙালির জাতীয়তাবাদের বিকাশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণ রূপ লাভ করেছে।

প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, বিশ্বের সব মানুষের আশা আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের সংগে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছেন। এ প্রতিশ্রুতি থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন-নিপীড়ন-গণহত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে বাঙালির এগিয়ে চলার পথ প্রদর্শক হিসেবে অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা; মানবতার বার্তাটি ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের সামনে থেকে মুছে দেননি। এখানেই বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘের ভাষণের পূর্ণতর রূপ উঠে এসেছে। বিশ্ব তাকিয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের দিকে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড তাঁকে ইতিহাস থেকে সরিয়ে দিতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবেনা। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হবে না।