বুধবার , ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আওরঙ্গজেবঃ বিতর্কিত এক মুঘল সুলতান।

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মুঘল সম্রাজ্যের সবচেয়ে বিতর্কিত সুলতান বলে ধরা হয় সুলতান আওরঙ্গজেবকে। উপমহাদেশে তাকে নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারো কাছে তিনি ইসলামের খলিফা তুল্য আবার কারো কাছে তিনি পাষন্ড এক শাসক। এ নিয়ে আছে নানা মত। ইংরেজদের পরাজিত করেছেন ইঙ্গ- মুঘল যুদ্ধে।

ভীষন রকম সাধাসিধা জীবন যাপন করতেন সুলতান আওরঙ্গজেব। ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফেজ। শাসক হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন আলেম। তিনি সংসার চালাতেন তার হাতে লেখা কুরআন ও টুপি বিক্রি করে।

মুঘল সম্রাট হিসেবে আওরঙ্গজেবের শাসনামল বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের সীমানা বহুদূর বিস্তার করেন। তার আমলে দক্ষিণাঞ্চলে ৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। তার শাসনামলে ভারত চীনকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে গড়ে উঠেছিল। যার পরিমাণ ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার, ১৭০০ সালে সমগ্র পৃথিবীর জিডিপি’র এক চতুর্থাংশ। তিনি ১৫৮ মিলিয়ন প্রজাকে শাসন করতেন।তার সময় মুঘল সাম্রাজ্যের বাৎসরিক করের পরিমাণ ছিল ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। যা তার সমসাময়িক চতুর্দশ লুইয়ের আমলে ফ্রান্সের বাৎসরিক কর এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছিল।

তার রচিত ফাতওয়ায়ে আলমগিরি, ইসলামি আইন শাস্ত্রের এক অন্যতম দলিল, তিনি ভারতে জিজিয়া কর চালু করেন। বলা হয় তিনি অমুসলিমদের উপর নির্যাতন চালাতেন। ধ্বংস করেছেন মন্দিরও। অনেক ইতিহাসবিদ এমন ইসলামি জীবনের জন্য তাকে তিরস্কার করে থাকেন। তবে বিষয়টি অতিরঞ্জিত ঘটনা বলেছেন অনেকে। প্রচলিত ইতিহাসে সম্রাট আওরঙ্গজেব কে হিন্দুবিদ্বেষী শাসক হিসাবে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সম্রাট আওরঙ্গজেব মন্দির ধ্বংসকারী ও মুর্তিসংহারক নন কারণ তিনি এর আগে বহু হিন্দু মন্দির নির্মাণ করে দিয়েছেন আহমেদাবাদের নগর শেঠকে শত্রুঞ্জয় মন্দির, গার্নার ও আবু মন্দিরের জন্য ভূমি দান করেছিলেন।

মন্দির ধ্বংসের বিষয়টি নিয়ে বলায় হয় নানা কথা, মন্দির ভাঙার মূল ঘটনাটা সম্পর্কে বিএন পাণ্ডে তার ‘মধ্যযুগের ইতিহাসের বিকৃতি’ প্রবন্ধে জানাচ্ছেন, সম্রাট আওরঙ্গজেব তার অধীনস্ত রাজাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলা অভিমুখে যাবার সময় ঘটনাটা ঘটে। সম্রাট যখন বানারসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, রাজারা সম্রাটকে জানালেন তিনি যদি বানারসে একদিন যাত্রা বিরতি করেন তাহলে রাজ মহিষীরা গঙ্গাস্নান করে বিশ্বনাথকে শ্রদ্ধানিবেদন করতে পারেন। সম্রাট সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলেন। গঙ্গাস্নান করে পূজা অর্চনা সেরে যখন বাকিরা ফিরে এলেন, কচ্ছের মহারানীর দেখা পাওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত নিখোঁজ রানীকে পাওয়া গেল ধর্ষিতা আর ক্রন্দনরত অবস্থায়। মন্দিরের ভিতরে রাণী ধর্ষিতা হয়েছেন মোহান্তের দ্বারা। সকল রাজারা তাতে ভীষণ ক্ষেপে যান। সম্রাটের কাছে তারা বিচার চাইলেন। সম্রাট সঙ্গে সঙ্গে বললেন মন্দির থেকে বিগ্রহ সরিয়ে নিয়ে কলুসিত মন্দিরটিকে গুড়িয়ে দেয়া হোক। তিনি মোহান্তের অপরাধে বিগ্রহটিকে কোনো অসম্মান হতে দিলেন না আর মোহান্তকে কঠিন সাজা দেয়ার নির্দেশ দিলেন।

বর্তমানে যেসব তথ্য তত্ত্ব নিয়ে আওরঙ্গজেবকে হিন্দু বিদ্বেষী বলা হচ্ছে তা পরিকল্পিত ভাবে বৃটিশরা ছড়িয়েছে বলে অনেকের অভিমত। এর পিছনে কারনও আছে, কারন হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লাগাতে পারলে বৃটিশদেরই লাভ এতে তারা তাদের শাসন কার্য চালিয়ে যাবে নির্বিঘ্নে। সাধারন প্রজারা হিন্দু মুসলিম দুই ভাগ হয়ে লড়াই করবে। আর তারা করবে ভারত শাসন। অনেক বাস্তবতায় এ বিষয়টি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।

আওরঙ্গজেব এক বিতর্কিত চরিত্র, আজো ভারতে তাকে নিয়ে চলছে রাজনৈতিক নোংরা খেলা। এসব নোংরামির অবসান হোক এটাই প্রত্যাশা।