নিজস্ব প্রতিবেদক:
মধ্য এশিয়ার উত্তরান্ঞ্চল থেকে ধেয়ে আসা এক ভয়ংকর ঝড়ের নাম মোঙ্গল। মোঙ্গলদের আক্রমন ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও ভয়ংকরতম এক অধ্যায়। বলা হয় চেঙ্গিস খান একাই ৪ কোটি মানুষ হত্যা করেছেন। এত বেশি নারীকে তিনি ধর্ষন করেছেন যে বর্তমান বিশ্বের ১.৫% মানুষ তার বংশধর। অসংখ্য শহর জনপদকে এমন ভাবে ধ্বংস করেছেন যে সেখানে ফের মানুষের বসবাস গড়ে উঠতে লেগে গেছে প্রায় ১০০- ২০০ বছর। যখনই একটা শহর মোঙ্গলরা ধ্বংস করতো তখনই শহরের প্রায় লাখ খানেক মানুষের মাথা কেটে সদরদরজায় পিরামিড বানিয়ে দিতো। পৃথিবী মোঙ্গলদের ধ্বংসযজ্ঞে ভারী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ১২৬০ সালে হলো ভিন্ন কিছু, থেমে গেলো মোঙ্গলদের ধ্বংসযজ্ঞ।
১২৫১ সালে সিংহাসনে আরোহন করেন মংকে খান। গ্রেট চেঙ্গিস খান ততদিনে পরপারে চলে গেছেন। তার নাতি মংকে খান এখম মোঙ্গল সম্রাজ্যের রাজা। মংকে তার ভাই হালাকুকে নির্দেশ দেয় পশ্চিমের ভুমিগুলো দখল করতে। নির্দেশ পেয়ে ৫ বছর যাবত সৈন্য সংগ্রহ করে হালাকু, অভিজান শুরু করেন। পথে যেই শহর, যেই জনপদ পড়েছে সাথে সাথে ধ্বংস হয়ে গেছে মোঙ্গলদের বর্বরতায়। মোঙ্গলদের রীতি অনুজায়ী প্রতিটা মানুষের মাথা দিয়ে তারা শহরের সদর দরজায় বানায় পিরামিড। একেকটা পিরামিডে থাকতো লাখ লাখ মানুষের মাথা। সে সময় শহর গুলোতে ১০-১২ লাখ মানুষ থাকতো।
এভাবে আগাতে আগাতে হালাকু এসে পড়ে পড়ে ফিলিস্তিনে। পথিমধ্যে অনেক শহরের অনেকে হালাকুর সাথে যোগ দেয়। নাইট টেম্পলার, হাসাসিন, ক্রুসেডার,ফ্রাংক,এমনকি দামেশ্কের আইয়ুবিরাও। সবমিলিয়ে এক ভীষন ভয়ানক রুপ ধারন করে মোঙ্গলরা।
এদিকে সেসময়ের মুসলিম সালতানাত গুলোর মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিলো মামলুকরা। মামলুক শব্দের অর্থ দাস। তারা ছিল তুর্কি ও ইউরোপীয় দাসদের একটা দল। মামলুকরা ছিল ভীষন শক্তিশালী। মামলুক সালতানাত দখলের জন্য প্রথমেই মোঙ্গল দূতদের একটি দল সুলতান সাইফুদ্দীন কুতুজের কাছে আসেন। দূতদের উদ্ধতস্বভাব দেখে সাইফুদ্দীন তাদের হত্যা করে যুদ্ধ ঘোষনা করেন।
দুই পক্ষের মাঝে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠে। এদিকে মংকে খান মারা যান পরবর্তী উত্তরাধিকার এর জন্য সভা ডাকা হয়, তাই হালাকু সৈন্যদের একাংশ নিয়ে মঙ্গোলিয়ার দিকে রওনা দেয়।যুদ্ধের জন্য রেখে যান সেনাপতি কিতবুকাকে। মোঙ্গলরা ছিল সংখ্যায় প্রায় ১২,০০০।
মামলুকরা ফিলিস্তিন সম্পর্কে ভালো জানতো, তাই তারা কৌশল করে, তারা পাহাড়ে লুকিয়ে থাকে আর একটা অংশ হিট এন্ড রান মোঙ্গলদের টেনে আনবে বলে পরিকল্পনা করা হয়। পাহাড়ে লুকিয়ে থাকেন সাইফুদ্দীন কুতুজ নিজে। আর মোঙ্গলদের ভাগিয়ে আনতে পাঠান রুকনুদ্দীন বাইবার্সকে।
১২৬০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। শুরু হলো যুদ্ধ। কিতবুকার সৈন্যকে আক্রমন করে পালাতে থাকেন রোকনুদ্দীন বাইবার্স। আসলে এটা ছিল একটা কৌশল। কিতবুকা না বুঝে ধাওয়া করা শুরু করে। ধাওয়া করতে করতে পাহাড়ি এলাকায় এলে বেরিয়ে আসে সাইফুদ্দীনের সৈন্যরা। ঘেরাও এর মধ্যে পড়ে যায় পুরো মোঙ্গল বাহিনী। এবার রুকনুদ্দীন বাইবার্স উন্মত্ত তলোয়ার নিয়ে ভয়ানক আক্রমন শুরু করেন সাথে কুতুজের বাহিনী। মারাত্মক রকম সংঘর্ষ হয়। পৃথিবী সাক্ষী হয় দুই মনস্টারের লড়াইয়ের। যেমন মামলুক তেমন মোঙ্গল।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে মামলুকদের বাম দিকে বুহ্য ভেদ করে ফেলে মোঙ্গলরা। এতক্ষন দুর থেকে সব দেখছিলেন সাইফুদ্দীন এবার তিনি শিরস্ত্রাণ খুলে ফেলেন যাতে সবাই তাকে চিনতে পারে। নিজেই নেমে পড়েন যুদ্ধে। সাইফুদ্দীনের ব্যক্তিগত সৈন্যদের আঘাতে ফের গতি পায় মামলুকরা।
সাথে মামলুলদের হাত কামান ব্যবহার করা হয়। মামলুকদের হাত কামানের সামনে টিকতে পারেনি মোঙ্গলরা। পুরো বাহিনী একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
মুসলিম মামলুকদের হাতে
মোঙ্গলরা এরপর আর আগাতে পারেনি,হালাকু আরেকবার চেস্টা করেছিলেন কিন্তু তারই আরেক ভাই বারকে খান যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন তিনি তাকে পরাজিত করেন। ওদিকে সাইফুদ্দীন কুতুজ নিহত হন তার আমীরদের দ্বারা বাইবার্স হন নতুন সুলতান। মামলুকদের কাছে সমগ্র ইউরোপ ও আরব ঋনী।
মামলুকরা সেদিন না থাকলে ইউরোপ ও আরবের ইতিহাস ভিন্ন হতো।