আসাদ আজিম:
ইতিহাস জুড়ে রাজা বাদশাহদের নামি দামী শখের কথা আমরা সবাইই জানি। কখনো শাহজাহানের তাজমহল, কখনো আফ্রিকার মানসা মুসার আভিজাত্য। সবই যেন জানান দেয় তাদের বিলাসী জীবনের কথা৷ বর্তমানে রাজা বাদশাহ না থাকলেও হাল আমলে আরবের ধনকুবেরদের জীবনও তেমনই বলা যায়। তবে ইতিহাসে একজনের ছিল ব্যতিক্রমী শখ।
টিপু সুলতানের নাম ইতিহাস প্রেমিরা শুনেনি এমনটা হতেই পারে না। তবে মহীশুরের বাঘ টিপু সুলতানের ছিল এক অদ্ভুত শখ। তিনি ছিলেন বাঘ প্রেমিক। মহীশুরের সে সময়ের প্রচলিত ভাষায় টিপু শব্দের অর্থ হয় বাঘ। ছোটো থেকে মারাত্মক ক্ষিপ্র হওয়ায় তাকে এ নাম দেন তার পিতা আলী হায়দার।
ছোট থেকেই সুলতান সবসময় বাঘের গল্প শুনতে চাইতেন। নিজের মাঝে ব্যাঘ্র সত্তা লালন করতেন তিনি। ১৭৮২ সালে যখন তিনি ক্ষমতায় আসীন হন তখন তার পিতার পুরোনো সিংহাসন তার পছন্দ হয়নি। তিনি সেই সিংহাসনকে আরও বড় করেন,, ডোরাকাটা বাঘের চামড়ার আদলে স্বর্ন দিয়ে তৈরী করেন সেই সিংহাসন। হাতলে রাখতেন বাঘের মাথার মুর্তি। পেছনে শোভা পেত গর্জন রত দুটি বাঘের প্রতিমুর্তি। দুর থেকে দেখলে মনে হত বাঘের উপর বসে আছেন সুলতান,, যেন বাঘের উপর আরেক বাঘ।
এখানেই থেমে নেই সুলতানের ব্যাঘ্র প্রীতি। সুলতানের রুমাল ছিল হলুদ কালো ডোরাকাটা। বিছানার চাদর, কার্পেটও তেমন। তলোয়ারের হাতল ছিল বাঘের আকৃতির। তার সৈন্যদের বর্মে উৎকীর্ণ থাকতো বাঘের গর্জনরত প্রতিরুপ। সৈন্যদের ব্যবহার্য তলোয়ার, বল্লম, বন্দুকগুলোর নল, কুদো, হ্যামারেও আঁকা থাকতো বিভিন্ন আকারের বাঘের প্রতিরূপ কিংবা মূর্তি। মহীশুরের প্রচলিত মুদ্রায় বাঘের মুখও খোদাই করে চালু করেছিলেন টিপু সুলতান। এবং পুরো রাজবাড়ীতে ছিল ডজন খানেক বাঘ, এর মধ্যে সার্বক্ষনিক সদর দরজায় বাঁধা থাকতো দুটি।
এখানেই শেষ নয় সুলতানের বাঘের প্রতি অনুরাগ। বাঘের প্রতি তীব্র আবেগ থেকে তিনি বিচিত্র এক খেলনা বানিয়েছিলেন, যা সারা দুনিয়ায় “টিপু’স টাইগার” (Tipu’s Tiger) নামে বিখ্যাত হয়ে আছে। ফরাসি যন্ত্রকুশলীদের দ্বারা নির্মিত প্রমাণ আকারের এই খেলনাটিতে ক্লকওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহৃত হয়েছিলো। খেলনায় দম দিয়ে ছেড়ে দিলে এর সাথে লাগানো একটি অর্গান পাইপ থেকে রক্ত হীম করা বাঘের প্রচণ্ড গর্জন, আর এক ইংরেজের প্রচণ্ড গোঙানির আওয়াজ বের হতো। পুরো খেলনাটি ছিলো এরকম: একজন ইংরেজ একটি বাঘের থাবার মধ্যে অসহায়ভাবে পড়ে গোঙাচ্ছে আর একটা বাঘ প্রচন্ড আওয়াজ করে সেই ইংরেজের বুকের উপর চেপে গলা কামড়ে ধরতো। তখন ইংরেজটি তার হাত উঠিয়ে চেষ্টা করতো বাঘের মাথাটি এদিক-ওদিক সরিয়ে দিতে। এ থেকে ইংরেজদের প্রতি তার ঘৃণার প্রমান পাওয়া যায়।
সারা জীবন সুলতান ছিলেন বাঘের মতই ক্ষিপ্র। উল্লেখ্য আজকের এ দিনেই সিংহাসনে আরোহন করেন টাইগার অফ মহীশুর দ্যা টিপু সুলতান
তথ্যসুত্রঃ
খন্দকার জাহিদ মুরাদ (সেপ্টেম্বর ১৯৯২)। “ইতিহাস:বাঘ ও টিপু সুলতান”। নতুন ঢাকা ডাইজেস্ট (প্রিন্ট)। ঢাকা। পৃষ্ঠা ৪৫-৪৭।