বৃহস্পতিবার , ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দানবীর হাজি মুহাম্মদ মহসিনের জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কিছু মানুষ ইতিহাসে অমর হয়ে থাকেন,তাদের অভিতপুর্ব কর্মের জন্য। তাই বলা হয় “কীর্তিমানের মৃত্যু নাই ” কিন্তু এও সত্য যে মানুষ মরণশীল। তাকে চলে যেতে হয় মায়ার এই সংসার ছেড়ে। তেমনি একজন দানবীর হাজি মুহাম্মদ মহসিন। আজ তার ২৯১ তম জন্মদিবস।

যতটুক জানা যায়, হাজি মুহাম্মদ মহসিনের পুর্বপুরুষরা ছিলেন পারস্যের অধিবাসী সম্ভ্রান্ত বনিক। ব্যবসার জন্যই তার পুর্ব পুরুষরা এ দেশে আসেন এবং মুর্শিদাবাদ হতে ব্যবসা করতে থাকেন।
তার পিতা ছিলেন হাজী ফয়জুল্লাহ এবং মাতা জয়নব খানম। পিতা ফয়জুল্লাহ ছিলেন প্রভুত ভূ সম্পত্তির মালিক। তাঁর মাতা জয়নবকে বিয়ের আগেও হাজী ফয়জুল্লাহ বিয়ে করেছিলেন। এবং জয়নব খানমেরও এর পুর্বে বিয়ে হয়েছিল এবং মন্নুজান নামে এক মেয়েও ছিল তার। সাবেক স্বামীও ছিলেন বিরাট নৃপতি। তিনি মারা যাওয়ার পর এ বিরাট সম্পদ তাই সরাসরি চলে আসে মেয়ে মন্নুজানের হাতে। হুগলি, যশোর, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়ায় তার জায়গির ছিল।

এদিকে মহসিন তার সৎ বোন মন্নুজান খানমের থেকে আট বছরের ছোট ছিলেন। সৎ হলেও প্রথম থেকেই তিনি অনুগতভাবে তাঁর প্রতি বড় বোনের দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তাঁর প্রথম বছরগুলিকে কোমল ভক্তির সাথে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। হাজী ফয়জুল্লাহর পরিবারে একত্রে বেড়ে ওঠা নবজাতক দুই শিশু তারা নিজেদের অবিচ্ছেদ্য সক্ষম সঙ্গী ছিল এবং শৈশব দিনের প্রথম স্মৃতি হিসেবে তাদের মধ্যে যে দৃঢ় ও গভীর স্নেহ সর্বদা বিদ্যমান ছিল। পড়াশুনাও করেছেন একই সাথে। ফলে মা, শিক্ষক, বোন, সর্বপোরি একজন অভিবাবকের স্থান পেয়ছিলেন মন্নুজান।

১৮০৩ সালে মন্নুজানের মৃত্যুর পর মহসিন তার উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পদের মালিক হন। মহসিন খুব ধার্মিক ছিলেন এবং সহজসরল জীবনযাপন করতেন। তিনি চিরকুমার ছিলেন। বিপুল সম্পদ তিনি দানসদকায় ব্যয় করতেন। ১৭৬৯-৭০ সালের সরকারি দলিল অনুযায়ী তৎকালীন দুর্ভিক্ষের সময় তিনি অনেক লঙ্গরখানা স্থাপন করেন এবং সরকারি তহবিলে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।১৮০৬ সালে তিনি মহসিন ফান্ড নামক তহবিল প্রতিষ্ঠা করে তাতে দুইজন মোতাওয়াল্লি নিয়োগ করেন। ব্যয়নির্বাহের জন্য সম্পত্তিকে নয়ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি ভাগ ধর্মীয় কর্মকাণ্ড, চারটি ভাগ পেনশন, বৃত্তি ও দাতব্য কর্মকাণ্ড এবং দুইটি ভাগ মোতাওয়াল্লিদের পারিশ্রমিকের জন্য বরাদ্দ করা হয়।দুনিয়া বিমুখ, ও পরোপকারী মহসিন এসব খরচ করতে থাকেন জনহিতৌষী কাজে। বোনও তাতে সম্মতি জানান। বাংলায় তিনি অসংখ্য মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ইত্যাদি জনকল্যান মুলক কাজ করে মানুষের মনে আজ ৩০০ বছর পরও আছেন এক কিংবদন্তি হয়ে।

এখনও অবধি দানের ক্ষেত্রে তুলনা অর্থে তার দৃষ্টান্ত ব্যবহার হয়ে থাকে। হুগলি মহসিন কলেজ এবং হুগলি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময় মহসিনের ওয়াকফকৃত অর্থ ব্যবহৃত হয় এবং তার পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বিএনএস হাজী মহসিন-এর নাম তার স্মরণে রাখা হয়েছে। মহসিন ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় ১৮৭৪ সালে ঢাকায় ঢাকা মোহসীনিয়া মাদ্রাসা (বর্তমানে ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ), চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম মোহসিনীয়া মাদ্রাসা (বর্তমানে হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ) এবং রাজশাহীতে রাজশাহী মাদ্রাসা (বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রাজশাহী) প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মহসিন ফান্ডের অর্থে অসংখ্য দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়।

উল্লেখ্য, জনহিতৌষী এ দানবীর ১৮১২ সালে ৮০ বছর বয়সে মারা যান।