চট্টগ্রাম ব্যুরো:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে অছাত্র, বিবাহিত ও হত্যা মামলার আসামি মহিদুল হাসান হান্নানকে কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক ঘোষণা করে নতুন কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ৷ এতে ক্ষিপ্ত হয়েছেন নতুন কমিটির অন্য সদস্যরা।
তারা বলছেন, কুতুবদিয়া উপজেলা জামাত-বিএনপির ঘাঁটি। নির্বাচনের আগে হুট করে মধ্যরাতে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজনকে আহবায়ক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই এর প্রতিবাদ জানিয়েছি৷ এখনো জানিয়ে যাচ্ছি। যদি তাকে এ পদ থেকে সরানো না হয়। আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের সদস্য এরশাদুল হাবীব রুবেলকে ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনার দুদিন পর ১৭ অক্টোবর তার মা মমতাজ সুফিয়া আক্তার বাদী হয়ে ১৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
দুই বছর তদন্তের পর ২০০৮ সালে কুতুবদিয়া থানা পুলিশ আদালতে ৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। আদালত শুনানি শেষে সবার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন, ২০১০ সালে শুরু হয় মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম।
সেই অভিযোগপত্রের ৬নং আসামী মুহিদুল হাসান হান্নান কে আহবায়ক করে গত ৩১ মার্চ কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের দশ সদস্য বিশিষ্ট সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করেছে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ।
২০১৫ সালের ১৩ নভেম্বর রুবেল হত্যা মামলার বাদী তার মা মমতাজ সুফিয়া আক্তার মৃত্যুবরণ করলে ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার বাদীর জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন রুবেলের ছোট ভাই ব্যারিস্টার মো. হানিফ বিন কাশেম।
নিজের ভাই হত্যায় অভিযুক্তকে ছাত্রলীগের নতুন কমিটির শীর্ষ কমিটির পদে হতবাক হয়েছেন হানিফ। তিনি জানান, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত ও সম্পত্তির বিবাদের জেরে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ এলাকায় প্রকাশ্যে তার ভাইকে খুন করা হয়।
হত্যাকান্ডে হান্নানের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়ে পুলিশ তার নাম অভিযোগপত্রে যুক্ত করে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, “২০০৬ সালে বড় ভাইয়ের হত্যার সময় আমি তখন মাধ্যমিকের ছাত্র। সন্তান হত্যার বিচার না দেখেই মারা গেছেন আমার মা-বাবা। অভিযুক্তরা বারবার বিচারিক কার্যক্রম ব্যহত করার চেষ্টা করেছে, আমরা এখনো নায্য বিচার পাইনি তবুও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।”
এদিকে, শুধু হত্যা মামলার আসামীই নয় ২০০৩ সালে এসএসসি পাশ করা বর্তমানে অছাত্র হান্নানের বয়স ৩৬।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর, ঢাকার আজিমপুরের জাহাঙ্গীর আহমেদের কন্যা উম্মে মিথিলা তাসনীম কে বিয়ে করেন কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের আবু ইউসুফের পুত্র হান্নান।
বিয়ের নিকাহনামা ও আন্টি পড়ানোর ছবি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
গঠনতন্ত্র না মেনে বিতর্কিত এমন একজনকে নেতা বানানোয় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে কুতুবদিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
আজিজুল ইসলাম নামে এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সে কেমনে আহবায়ক হলো বুঝতে পারছিনা। নিশ্চয়ই এখানে কোন কালো টাকা ও ক্ষমতার প্রভাব আছে। আমনা খু্ব শিগগিরই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করে তার বিরুদ্ধে আনিত সমস্ত অভিযোগ পেশ করবো।
অভিযুক্ত হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এর বাইরে আমি কিছু বলতে চাই না।