চট্টলা সংবাদ:
আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। টানেলটি খুলে দেওয়া হলে যানবাহনের চাপ বাড়বে পতেঙ্গা সড়কে। এ জন্য লালখান বাজার-পতেঙ্গা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটিও তড়িঘড়ি উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। যদিও এই উড়ালসড়কের নির্মাণকাজের অনেকটাই এখনো বাকি।
আগামী নভেম্বরে এটি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।
সিডিএ সূত্রের দাবি, ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ৮৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘উড়ালসড়কের পুরো কাজ শেষ করে আমরা উদ্বোধনে যাব।’
এদিকে কাগজে-কলমে সিডিএ ৮৩ শতাংশ শেষ দেখালেও প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ১০ কিলোমিটারে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নগরীর পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত। সল্টগোলা থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকার কাজও শেষ পর্যায়ে। দেওয়ানহাট মোড় থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। আর লালখান বাজার থেকে দেওয়ান হাট পর্যন্ত পিলার বসানো হয়েছে। এই উড়ালসড়কে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প নির্মাণের কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি র্যাম্পও নির্মাণ করা হয়নি।
১৫টি র্যাম্পই এক্সপ্রেসওয়েটি উদ্বোধনের পর নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান। এ ছাড়া যানবাহন চলাচলে টোলের হার নির্ধারণের কাজটিও তখন হবে বলে জানান তিনি।
টোল প্লাজা নির্মাণ ও যানবাহনের টোল নির্ধারণ সময়সাপেক্ষ হওয়ায় উদ্বোধনের পরই এ নিয়ে কাজ হবে জানিয়েছেন প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, ‘টোল নির্ধারণের জন্য আমরা কাজ করছি।’
চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও দ্রুততর করার উদ্দেশ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এটি একই সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, সিইপিজেড, কেইপিজেড ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগও সহজ এবং দ্রুততর করবে। তা ছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে এই সড়ক, যা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য এক মাইলফলক। উড়ালসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হলে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগবে। বর্তমানে এই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগে ২ ঘণ্টার বেশি।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় ২ বছর বাড়ানোর পর ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
উড়ালসড়কটি চালু হলে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে জানিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল ও উড়ালসড়ক নির্মাণ চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানীর অবয়ব দেবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও বিনিয়োগকারীদের বিমানবন্দরকেন্দ্রিক যাতায়াত ভোগান্তি লাঘবে এই সড়ক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।