বৃহস্পতিবার , ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন মা

চট্টলা সংবাদ প্রতিবেদন :

নবাবগঞ্জ থানার প্রাঙ্গণে গতকাল শুক্রবার দুপুরে বুকে অসহ্য যন্ত্রণায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ছিলেন আইরিন আক্তার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বিলাপ করছিলেন, ‘বাবা, তোমরা কারা? আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দাও। কী অপরাধে ওকে মেরে ফেলল?’ তাঁর মেয়ে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক রেহানা পারভীন, অপহরণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

মায়ের বুকফাটা কান্না যেন থামছেই না। সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ব্যারিস্টার হতে বিদেশে গিয়েছিল। আমার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমি আমার মেয়ের খুনিদের ফাঁসি চাই।’

রেহানা পারভীন ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার পাতিলঝাপ গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা লেহাজ উদ্দিন, একজন সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, এবং মা আইরিন আক্তার। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রেহানাকে তাঁর স্বামী আওলাদ হোসেনের যোগসাজশে অপহরণ, হত্যা এবং লাশ গুম করা হয়। প্রায় দুই মাস পর পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে এবং হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, রেহানার স্বামী আওলাদ হোসেনই এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। স্ত্রীকে হত্যা করার পর ঠাণ্ডা মাথায় তিনি পালিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান। সেখানে পৌঁছে শ্বশুর-শাশুড়িকে ফোন করে জানতে চান, রেহানা কোথায় আছেন এবং কেমন আছেন। এরপরই পরিবারের লোকজন রেহানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। ৩১ আগস্ট রেহানার মা নবাবগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এই ঘটনার পর, অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ ও ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশন ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের কাছে রেহানার বিষয়ে তথ্য চায়। ৮ সেপ্টেম্বর নবাবগঞ্জ থানায় রেহানাকে অপহরণের মামলা গ্রহণ করা হয়।

দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আশরাফুল আলম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রেহানার ননদ পাপিয়া আক্তারের খোঁজ পান এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাপিয়ার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, রেহানাকে জুলাই মাসের ৪ অথবা ৫ তারিখে হত্যা করা হয় এবং লাশ আশুলিয়ার নয়াহাটি এলাকায় তাঁর ননদের বাড়ির পাশে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। ঠাণ্ডা মাথায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আওলাদ হোসেন ১৩ জুলাই একাই অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে যান।