বুধবার , ১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কেমন ছিলো বাফুফে তে কাজী সালাউদ্দিনের ১৬ বছর

চট্টলা সংবাদ প্রতিবেদন :

অনেক স্বপ্ন আর আশার বুনন নিয়ে কাজী সালাহউদ্দিন বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ফুটবলের নতুন জাগরণ, জাতীয় দল ও ঘরোয়া লিগের উন্নতি, এবং দেশের ফুটবলে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাঁর নেতৃত্বের যাত্রা শুরু হয়েছিল। তাঁর সময়কালে বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠান স্পনসর হিসেবে যুক্ত হয়েছিল, যা ফুটবলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে।

প্রথমেই যদি ইতিবাচক দিকগুলো দেখা হয়, ঘরোয়া ফুটবলে সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রিমিয়ার লিগ নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা তার একটি বড় সাফল্য। দেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে ক্লাব ফুটবল আয়োজন করা হয়েছে এবং বসুন্ধরা কিংসের মতো দল এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে। শীর্ষস্থানীয় ফুটবলারদের পারিশ্রমিকও বেড়ে কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ফুটবলে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধিরই একটি সূচক।

সালাহউদ্দিনের অধীনে বাংলাদেশের নারী ফুটবলেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় নারী দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে, যা দেশের ফুটবলের জন্য একটি বড় অর্জন। এছাড়াও, অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ দলের মতো নারী ফুটবল দলগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সাফল্য অর্জন করেছে। তবে সমালোচকরা নারী ফুটবলের সাফল্যকে তেমন গুরুত্ব দেন না, কারণ জাতীয় পুরুষ দলের পারফরম্যান্স তার সময়ে বারবার হতাশ করেছে।

জাতীয় দলের উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে কাজী সালাহউদ্দিন বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি বিদেশি কোচ নিয়োগ, দলকে বিদেশে পাঠানো, উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং ভালো হোটেলে থাকার মতো অনেক সুবিধা দিয়েছিলেন। তবুও, জাতীয় দল ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে তেমন উন্নতি করতে পারেনি। বরং, তাঁর সময়ে বাংলাদেশ ১৯৭ নম্বরে নেমে যায়, যা একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হয়।

অবকাঠামোগত উন্নয়নে সালাহউদ্দিন বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা পূরণ হয়নি। দেশের ফুটবলে একটি আধুনিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামও সংস্কারের নামে পড়ে রয়েছে, যেখানে তিন বছর ধরে খেলা হয়নি। ফিফার অর্থায়নে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করার উদ্যোগও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি।

এছাড়া, দুর্নীতি এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে সালাহউদ্দিনের সময়ে। বাফুফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈমকে আর্থিক অনিয়মের দায়ে ফিফা দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া, বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদীকেও ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই সব ঘটনাগুলো সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ফুটবলে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসা কাজী সালাহউদ্দিন শেষ পর্যন্ত অনেকগুলো ব্যর্থতার ভার নিয়েই বিদায় নিচ্ছেন। তাঁর ১৬ বছরের মেয়াদে বাংলাদেশের ফুটবল ঘরোয়া লিগে কিছুটা উন্নতি করলেও জাতীয় দল এবং অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে বিশেষ সফলতা অর্জন করতে পারেনি।