শুক্রবার , ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হত্যা মামলা থেকে রেহাই পেয়ে আবারও বেপরোয়া ছাত্রলীগ নেতা রাকিব

হাটহাজারী প্রতিনিধিঃ

অপহরণের ২১ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার সংলগ্ন একটি পাহাড় থেকে মো.আক্তার নামে এক সিএনজি অটোরিক্সা চালকের কঙ্কাল এবং হাড়গোড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই মামলার আসামি ছিলেন উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাঈদ হাসান রাকিব।

দুর্বৃত্তরা তাকে জবাই করে হত্যার পর লাশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাহাড়ের গহিন জঙ্গলের ভেতর ফেলে রাখে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে আটকের পর তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক ওই পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে পুলিশ কঙ্কাল এবং হাড়গোড়গুলো উদ্ধার করেছে।

জানা গেছে, অপহরণকারীরা প্রথমে জানিয়েছিল, তারা লাশ মাটিতে পুঁতে রেখেছে। কিন্ত আমরা সেখানে গিয়ে দেখেছি, লাশটি গভীর জঙ্গলে পাহাদের খাদে ফেলে রেখেছিল। শিয়াল কিংবা অন্য কোন প্রাণী খেয়ে ফেলায় লাশের শরীরে কোন মাংস ছিলনা। আমরা শুধু কঙ্কাল এবং কিছু ছড়ানো, ছিটানো হাড়গোড় উদ্ধার করে।`

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী বাজার এলাকার সিএনজি অটোরিক্সা চালক আক্তার অপহরণের শিকার হন। ওইদিন হাটহাজারী বাজারের আলম নামে জনৈক ব্যক্তি তাকে নতুন সিএনজি অটোরিক্সা কিনে দেয়ার কথা বলে তাকে নগরীতে নিয়ে যান। এরপর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলনা। এরপর গত ১৫ সেপ্টেম্বর আক্তারের ভাই রফিক বাদি হয়ে হাটহাজারী থানায় একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, আলম নতুন অটোরিক্সা কেনার প্রলোভন দেখিয়ে আক্তারকে তার পুরনো সিএনজি অটোরিক্সাটি দু`হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য করে। এরপর তাকে নগরীতে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় পুলিশ রাউজান থেকে আজম নামে আলমের এক বন্ধুকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক দিনভর অভিযান চালিয়ে চকরিয়া থেকে আলমকে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা থেকে নাসির ও রাকিব নামে দু`জনকে আটক করেন।

রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে চারজন স্বীকার করে, তারা অপহরণের পর আক্তারকে হত্যা করে লাশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চাকসু ভবনের পেছনে কলা অনুষদের পাহাড়ে পুঁতে রেখেছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে পাহাড়ের ভেতর গভীর জঙ্গলে আক্তারের লাশ পাওয়া যায়।

এর পর দীর্ঘদিন গা ঢাকা দেয় রাকিব। পরে বিপুল টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে রেহাই পায় বর্তমান উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব। কিছুদিন নিজেকে অপরাধ জগৎ থেকে সরিয়ে রাখতে পারলেও। ফের যুক্ত হয়েছেন নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। কখনো ছিনতাই, আবার কখনো চাঁদাবাজি কখনো কখনো হত্যা চেষ্টা করেও টাকা নিয়েছেন রাকিব। উত্তর জেলা ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পর সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও হাটহাজারী এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেই চলেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফা তাগদা দেওয়া হলেও নিজেকে শুধরে না নিয়ে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে একটি পক্ষ। আমি নিজেকে অনেক আগেই শুধরে নিয়েছি। এখন আমি সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি করছি। কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি জড়িত নই।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হোসেন তপুর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।